বিশেষ লেখা

সৈয়দ বসারত আলী রহ. এর কারামত

21, Sep, 2021

সৈয়দ বসারত আলী রহ. এর কারামত

সময়টা ১৯৯২ সালের শীত মৌসুম। মসজিদ মাদ্রাসা অথবা ইসলামী সংঘঠন গুলোর উদ্যোগে ওয়াজ নছীয়তের সবচেয়ে উপযোগী সময়। ফসল কাটার পর উন্মুক্ত মাঠে সামিয়ানা টাঙিয়ে ষ্টেজ করেও এ মৌসুমে বিস্তর ওয়াজ নছীয়তের আয়োজন করা হয়। আমার মতো ক্ষুদে ওয়াজদের ও তখন চরম ব্যস্ততা। আমি তখন তাজপুর জামিয়া ইসলামিয়া ফুরকানিয়া মাদ্রাসায় কর্মরত। মৃখ্য মেহমান হয়ে যাওয়ার দাওয়াত এলো রবিদাশ জামে মসজিদে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে। ওয়াজদের শীর্ষ উদ্যোক্তা রবিদাশ গ্রামের নিবাসী জৈনিক হাজী সাহেব ও খ্যাতনামা রববানী পরিবার।

ওয়াজ শেষ হতে হতে রাত গ্রায় বারোটা বাজে। মঞ্চে সভাপতিত্ব করেছিলেন ছোট সাহেব খ্যাত ভাড়েরা পীরবাড়ীর সৈয়দ বসারত আলী সাহেব। সবেমাত্র বয়ান শেষ করে আমি মঞ্চে আসন নিয়েছি এমন সময় পীর সাহেব বললেন ‘নোমানী সাহেব’আজ মনে বড় ইচ্ছা করছে মদিনার খেজুর ও মক্কার জমজমের পানি খেতে। হেসে আমি বললাম- ইচ্ছা করলেই কি হয় পীর সাহেব, ও বস্তুগুলোতো আর ইচ্ছা করলেই পাওয়া যায়না। ভাবলাম পীর সাহেব তো খেয়ালী মানুষ। কখনকি ভাবেন আর বলেন তা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ বুঝা মুশকিল। এই ভাড়েরা পীরবাড়ীর পীর সাহেবদের কাছে আমার জানাশোনা ও ওঠবসা রয়েছে দীর্ঘদিনের। তারা আমাকে সম্মান ও স্নেহ করেন আর আমিও তাদের কে সমীহের চোখে দেখি। শরীয়ত পাবন্দ এ বাড়ীর পীর সাহেবদের সমন্ধ আমার উঁচু ধারনা রয়েছে।

ওয়াজ শেষে রাত্রি বাসের জন্য আমি রববানী সাহেবের বাড়ীতে চলেগেলাম আর পীর সাহেব গেলেন হাজী সাহেবের বাড়ীতে। সকালে বাদ ফজর নাস্তা করার কথা হাজী সাহেবের বাড়ী ।চলে গেলাম ওখানে। নাস্তার আয়োজন দেখেতো আমি অবাক। অন্যান্য আইটেমের সাথে রয়েছে মদিনার খেজুর ও জমজমের পানি। হাজী সাহেব বললেন তিনি গত বৎসর হজ্ব থেকে আসার সময় মদিনা থেকে খেজুর ও মক্কার জমজমের পানি নিয়ে আসেন। কিন্ত কি যেনো অজ্ঞাত কারণে এগুলো রয়ে গেছ অক্ষত। আজ হঠাৎ করে হাজী সাহেবের ইচ্ছা হলো মেহমানদের কে এগুলো দিয়ে আপ্যায়ন করার। পীর সাহেব ভাবলেশহীন ভাবে এগুলো খেয়ে পরিতৃপ্ত আর আমি বিস্ময়াভিমূত এই ভেবে যে গতকাল ওয়াজের মঞ্চে পীর সাহেবের ইচ্ছের সাথে কি কাকতালীয় প্রাপ্তি। পীর সাহেবের প্রতি আবারো শ্রদ্ধাবনত হতে ইচ্ছে জাগলো। তাদের দ্বারা সংঘঠিত অলৌকিক কর্মকান্ডের এই প্রথম পরিচিত নয় আমার।

আমি পূর্বেই বলেছি, তাদের সাথে চলাফেরা আমার দীর্ঘদিনের। প্রাসঙ্গিক ভাবে আরেকদিনের একটি ঘটনা এখানে বিবৃত না করে পারছিনা। পীর সাহেবের বাড়ীতে ইসলামী জলছা চলছিল। তিনি সভাপতিত্ব আসনে আসীন। হঠাৎ আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে সামনে বসা একটি স্রোতা ছেলেকে গল্লা দিয়ে পেঠাতে শুরু করলেন। সেকি প্রহার আর প্রহারের সেকি সহ্য ক্ষমতা। আমি ঘাবরে গেলাম,কি জানি কি হয়। ছেলেটা প্রতিবাদহীনভাবে হজম করে গেলো বেদম প্রহারটুকু। এভাবে পেঠালেন আরেকজন বয়স্ক লোককে। বলা নেই কওয়া নেই ক্রোধের বিন্দুমাত্র পুর্বলক্ষণ নেই, হঠাৎ করে চড়াও হয়ে যাওয়া।

কিছুক্ষণ পর আমি দেখা করলাম প্রহৃত যুবক ও বয়স্ক লোকটির সাথে। তাদের কাছ থেকে অসন্তুষ্টির কোন আভাসই পেলাম না। ছেলেটি বললো যে, সে পীর সাহেবের কাছে মুরিদ এবং পীর সাহেবের সাথে সে একটি ওয়দার বরখেলাফ করেছে এজন্য হয়তো তিনি তাকে প্রহার করেছেন। প্রহৃত বয়স্ক লোকটি বললো এ প্রহার তার কাম্য এবং তাঁর বিশ্বাস যে এটা তার মঙ্গল বয়ে আনবে অথবা অমঙ্গল দূর হবে। ভক্ত বৃন্দের দাবী হলো এ রকম প্রহার সুফল তাদের পরীক্ষিত।
বর্ণনাকারী: মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম নোমানী