১৯৩২ ইং সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী ভাড়েরা পীরবাড়ীর সম্মুখস্হ মাঠে ‘সুরমা ভ্যালী কৃষক শ্রমিক সম্মেলন’র প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্যোগ নেন সৈয়দ ইসমাইল আলী সাহেব। শুকনো মৌসুমে পায়ে হাঁটা পথে লেংগুরা হাওরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের যুগীবিলের তীরে সিলেট-আসাম অঞ্চলের কৃষক-সম্মেলন আহবান করে সাহসিকতার পরিচয় দেন তিনি। পাশেই রয়েছে তাজপুর,এক সময়ের রাজস্ব জেলা সদর ও ঐতিহ্যবাহী সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য অত্যন্ত উপযোগী স্থান। দুলাল পরগনা খ্যাত তাজপুর গোটা বৃহত্তর সিলেটের একেবারে মধ্যবিন্দুতে অবস্থিত। দুলালীর দাস চৌধুরী, হরিনগরের গুপ্ত ও নাগেরকোনা দাশমুনসী পরিবার সমূহের দাপুটে জমিদারীর মধ্যখানে কৃষক সম্মেলন ডাকা এবং অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে প্রমানিত হয় যে, সৈয়দ ইসমাইল আলী ও তার পরিবারের পর্যাপ্ত প্রভাব, জন সম্পৃক্ততা ও সাংগঠনিক সামর্থ্য ছিলো। জমিদার- জোতদার ও তাদের দাপুটে কর্মচারীদের হাত থেকে প্রজা সাধারণকে রক্ষা করার জন্য ১৮৮৫ ইং সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন প্রণীত হয়। কিন্ত সিলেট এ সময় আসাম প্রদেশের অন্তর্গত ছিলো। সে কারণে এ আইনের সুফল সিলেট অঞ্চলের প্রজাসাধারণ ভোগ করতে পারেন নি। অনেক পরে ১৯৩৬ ইং সালে সিলেট প্রজাস্বত্ব আইন প্রণীত হয় এই সম্মেলনের চার বৎসর পর। তখনকার দিনে সিলেটের ক্ষুদে অথচ দাপটে জমিদারের প্রজা নির্যাতন ও শোষণের ভয়াল প্রদর্শনী চলছিলো সে সময় প্রজা সাধারণের পক্ষ নিয়ে যারা লড়ছিলেন তাদের মধ্যে সৈয়দ ইসমাইল আলী ছিলেন সামনের কাতারে। ১৯৩২ সালে ভাড়েরায় অনুষ্ঠিত সুরমা ভ্যালী কৃষক সম্মেলন ছিলো সংগঠনের প্রথম অধিবেশন। এই সম্মেলনে গাভুরটিকির ডাঃ মরতুজা চৌধুরীকে সভাপতি করে সিলেট জেলা কৃষক ও শ্রমিক সমিতি গঠন করা হয়। এ অঞ্চলের কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করা ও তাদের ন্যায্য দাবী প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে সম্মেলন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
|