বৃটিশ ভারতে আসাম বাংলার মুসলিম জাগরণে যে সকল মুসলিম মনীষি ও সন্তান দিবারাত্রি পরিশ্রম করে সাফল্য লাভ করেছিলেন তাঁদের প্রত্যেকেরই জীবন কথা ইতিমধোই সিলেট বিভাগের বিভিন্ন লেখক ও গবেষক বৃন্দ কতৃক প্রকাশিত বই পুস্তকে স্হান পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রাচীনতম মাসিক সিলেটের আল- ইসলাহ পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায় ও এতদ সম্পর্কিত অনেক লেখা ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। লেখক ও পাঠক বৃন্দ একেবারে অগ্রসর হয়ে তথ্য ও তত্বসমুহ সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়াও সিলেট বিভাগের অন্যতম কৃতি সন্তান বাংলাদেশে সরকারের সাবেক যুগ্ম-সচিব দেওয়ান নুরুল আনওয়ার হোসেন চৌধুরী কর্তৃক লিখিত ও ঢাকার বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত জালালাবাদের কথা বইটির দ্বিতীয় সংস্করণে ও সিলেটের অনেক মুসলিম মনীষিদের কথা বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। আলোচ্য ভাড়েরা পীরবাড়ি আধ্যাত্মবাদের সার্থক উত্তরাধিকার নামক পুস্তকটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক হিসাবে পাঠকদের কাছে পরিচিতি লাভ করবে বলে আমি আশা করি। কেননা সাবেক বালাগঞ্জ বর্তমানে ওসমানিনগর থানার ভাড়েরা একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম। ঐ গ্রামের পীরবাড়ি একটি ঐতিহ্যবাহী ও আধ্যাত্মিক পরিবার। এই বিখ্যাত পরিবারের পীর সৈয়দ ইসমাইল আলী রহঃ বৃটিশ আমলে একজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি বৃটিশ আমলে বৃটিশ বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৩০ সালের পর থেকে তথা তৎকালীন আসাম প্রদেশের সর্বত্র কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপক প্রচার লাভ ঘটে। অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ এর বিভিন্ন লেখায় এর উল্লেখ রয়েছে।আসাম প্রাদেশিক কৃষান শ্রমিক সমিতির সাথে আমাদের ইটা কুইসার সৈয়দ পরিবার ও সিংকাপনী মাওলানা পরিবারের সকল আলেমরাই জড়িত ছিলেন।
আমার এক চাচা স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী ইটা সিংকাপনী রহঃ আসাম প্রাদেশিক সেক্রেটারী জেনারেল ছিলেন। ১৯৩২ সালে ২৫ শে ফেব্রুয়ারি তারিখে সুরমা উপত্যকার তথা সিলেট ও কাছাড় অঞ্চলে কৃষক-শ্রমিক সম্মেলনের স্হান নির্ধারণ হয় ভাড়েরা পীর সৈয়দ ইসমাইল আলী সাহেবের বাড়ীর সম্মুখের মাঠ। আয়োজকদের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন সৈয়দ ইসমাইল আলী রহঃ এই সভায় সভাপতিত্ব করতে এসেছিলেন বর্তমান ভারতের কাচাড়ের প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী কৃষান-শ্রমিক নেতা মরহম হযরত আলী বড় লস্কর। বৃটিশ ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী ইটা সিংকাপনী সাহেবের জীবন ও কর্মের উপর লিখিত একটি প্রবন্ধে হযরত আলী বড় লস্কর সাহেব যে বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন তা এখানে বর্তমান কালে পাঠকদের জন্য অবিকল উদৃত করা হলো
১৯৩২ ইং সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী তারিখে সিলেটের বালাগঞ্জের নিকটবর্তী ভাড়েরা পীরবাড়ীর মাঠে আয়োজিত ও অনুষ্ঠিত সুরমা উপত্যকায় কৃষক-শ্রমিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করার জন্য আমি সিলেট শহরে উপস্থিত হইলে জনাব সিংকাপনী সাহেব, জনাব আলী আজগর নূরী, জনাব ডাঃ মর্তুজা চোধুরী প্রমুখ আমাকে মৌলভী মজম্মিল আলী সাহেবের মুসলিম হোটেলে নিয়ে অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন করান। তখনই সিংকাপনী সাহেবের সিলেট কাচাড়ের কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা হয়। পরের দিন ভাড়েরা পীরবাড়ীর সামনে বিরাট সম্মেলনে প্রায় ২০/২২ হাজার লোকের সমাবেশের আমি ছিলাম সভাপতি। মাওলানা সিংকাপনী ও আলী আজগর নূরীর উদাত্ত ভাষণ সিলেট কাচাড়ের লক্ষ লক্ষ কূষাণের প্রাণের কথা মর্মের কথা ও কৃষান শ্রমিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে স্মরণীয় যুক্ত তত্ব পেশ করেন। সিংকাপনী সাহেবের অগ্নিঝরা ভাষণ সভামন্ডপ উদ্বেগ করিয়া তুলেন। এমনই ভাবে মুসলিম জাগরণে তৎকালীন মুসলিম নেতৃবৃন্দ কত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে গিয়েছেন তা বর্তমান কালের পাঠক সমাজ তথা সমাজ কর্মীদের উপলদ্ধি করা বেশ কঠিন ব্যাপার। সুখের বিষয় ভাড়েরার সৈয়দ ইসমাইল আলী রহঃ সাহেবের অধঃস্হন বংশধররা তাদের পূর্ব পুরুষের গৌরবময় কাহিনী সংকলিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করায় সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আমি তাদের কর্মের সফলতা কামনা করছি।
(নিবন্ধটি সৈয়দ জয়নাল আবেদীন, এডভোকেট বাংলাদেশ, সুপ্রিমকোর্ট , হাইকোর্ট বিভাগ,নোটারী পাবলিক মৌলভীবাজার জেলা কতৃক লিখিত।)
|